মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৫

বাটোয়ারা বা বন্টননামা দলিল না করলে কি কি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে?

বণ্টননামা দলিল মূলত একটি লিখিত চুক্তি যা পরিবার বা অংশীদারদের মধ্যে সম্পত্তি ঠিকঠাক ভাবে বন্টন করার উপায় নির্ধারণ করে। জমি, বাড়ি বা অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যদি একাধিক ব্যক্তির মালিকানায় থাকে, তবে সেগুলোকে নির্দিষ্ট নিয়মে ভাগ করার জন্য বণ্টননামা দলিল অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। 

১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প এক্টের ২ (১৫) ধারায় বলা হয়েছে বণ্টন দলিল ও বণ্টক দলিল অর্থ একই। যখন কোন সম্পত্তির সহ-শরিকগণ তাদের সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় পৃথকভাবে ভাগ করে নেয় বা নিতে সম্মত হয়ে কোন দলিল করেন তাকেই বণ্টন দলিল বলা হয়।
বাটোয়ারা বা বন্টননামা দলিল
এই ভূখণ্ডের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, অতীতে লিখিত দলিলের ব্যবহার কম ছিল। মানুষ মুখে মুখে জমি-জমা বা তাদের সম্পত্তি বন্টন করে নিত। তখনকার দিনে দলিলের রেজিস্ট্রীও ইচ্ছামত ছিল কারন সে আমলে মানুষের জবানের মূল্যয়ন ছিল। মানুষের মুখের কথাই দলিলের মত ছিল। কিন্তু বর্তমানে লিখিত দলিল ছাড়া কেই কারো উপর তেমন ভরসা করে না। তাই বন্টননামা বা বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রী করে নিতে হয়।

বন্টননামা দলিল না করলে নিম্নোক্ত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে?

১. দাখিলা (খাজনা/এলডি ট্যাক্স): অধিকাংশ ওয়ারিশসূত্রে নামজারির আবেদনে রেকর্ডীয় মালিকের জমির পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে খাজনা/এলডি ট্যাক্স এর পরিমাণও বেশি থাকে এবং আবেদনকারী খাজনা পরিশোধ ছাড়াই মিউটেশনের আবেদন করেন। অথচ ভূমির মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে দখল, দাখিলা ও দলিল অত্যাবশ্যকীয়।

২. দখল: অধিকাংশ ওয়ারিশসূত্রে নামজারির আবেদনে রেকর্ডীয় মালিকের একাধিক খতিয়ানে ও দাগে জমি থাকে। কিন্তু ওয়ারিশসূত্রে আবেদনকারী সকল দাগে অংশ অনুসারে দখলে থাকেন না। বরং এক বা গুটিকয়েক দাগে দখল থাকে। সকল দাগে অংশ মোতাবেক দখল না থাকায় মালিকানা পরিবর্তনের শর্তানুসারে (দখল, দাখিলা ও দলিল) মিউটেশনের মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তন সম্ভব নয়।

৩. মিউটেশন তামিল: ওয়ারিশসূত্রে (অনেক ক্ষেত্রে ওয়ারিশের সংখ্যা ২০ জন বা তার বেশি) নামজারির একাধিক আবেদন মঞ্জুর হলে সেক্ষেত্রে ২নং রেজিষ্টারে তামিল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

৪. ওয়ারিশকে বঞ্চিত করা: অনেকক্ষেত্রে এক বা একাধিক ওয়ারিশকে অথবা বিশেষ করে সৎ ভাই-বোনদের বঞ্চিত করা হয় এবং ১৫০ ধারার মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

৫. খাজনা/এলডি ট্যাক্স আদায়ে জটিলতা: একজন ওয়ারিশ মিউটেশনের মাধ্যমে রেকর্ডীয় খতিয়ান থেকে বের হয়ে গেলে বাকি ওয়ারিশদের রেকর্ডীয় খতিয়ান সমুদয় খাজনা/এলডি ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয় নতুবা বাকি ওয়ারিশদের খাজনা/এলডি ট্যাক্স বকেয়া হিসেবে থেকে যায়।

৬. হস্তান্তর পরবর্তী দখল: এক বা একাধিক ওয়ারিশ প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে জমি হস্তান্তর করলে নতুন প্রভাবশালী মালিক একাধিক দাগে ও খতিয়ানে জমি ক্রয় করলেও তুলনামূলক দামি ও সুবিধাজনক জমি দখল করেন। ফলে বাকি ওয়ারিশরা ন্যায্য অধিকারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান।

৭. পরবর্তী জরিপ: একাধিক দাগে ও খতিয়ানে অংশ অনুযায়ী জমি থাকলেও এক বা গুটিকয়েক দাগে ভোগদখল থাকলে পরবর্তীতে জরিপের সময় জটিলতার সৃষ্টি হবে। একাধিক দাগে জমি থাকলে দখল অনুসারে এক দাগে রেকর্ড করার সুযোগ থাকবে না।
বাটোয়ারা বা বন্টননামা দলিল না করলে কি কি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে? Dr. Delowar Jahan Imran 5 of 5
বণ্টননামা দলিল মূলত একটি লিখিত চুক্তি যা পরিবার বা অংশীদারদের মধ্যে সম্পত্তি ঠিকঠাক ভাবে বন্টন করার উপায় নির্ধারণ করে। জমি, বাড়ি বা অন্যান...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন