সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

পদাবলী - কবি বিদ্যাপতি

এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর।
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর ||

ঝঞঝা ঘন গরজন্তি সন্ততি
ভুবন ভরি বরিখিন্তিয়া।
কান্ত পাহুন কাম দারুণ
সঘনে খর শর হন্তিয়া ||

কুলিশ শত শত পাত-মোদিত
মূর নাচত মাতিয়া।
মত্ত দাদুরী ডাকে ডাহুকী
ফাটি যাওত ছাতিয়া ||

তিমির ভরি ভরি ঘোর যামিনী
থির বিজুরি পাঁতিয়া।
বিদ্যাপতি কহ কৈছে গোঙায়বি
হরি বিনে দিন রাতিয়া |

আলোচনাঃ 

আলোচ্য পদটি বিদ্যাপতি দ্বারা রচিত ব্রজবুলি ভাষায় রচিত মাথুর পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।
এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর = সখী হে , আমার দুঃখের আর সীমা নেই।
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর= এই ভরা বর্ষা ভাদ্র মাস
শূন্য মন্দির মোর= আমার মন্দির শূন্য।
ঝম্পি ঘন গর জন্তি সন্ততি= মেঘ ঝেপে এসেছে সর্বদা গর্জন করছে।
ভুবন ভরি বরখন্তিয়া = ভুবন ভরে বৃষ্টি হচ্ছে।
কান্ত পাহুন কাম দারুণ = আমার কান্ত আজ প্রবাসী।
সঘনে খর শর হন্তিয়া= তীক্ষ্ণ শর নিক্ষেপ করছেন নিষ্ঠুর কামদেব।

কুলিশ শত শত পাত - মোদিত / ময়ূর নাচত মাতিয়া= শত শত বজ্রপাতের শব্দে আনন্দিত হয়ে আমোদিত হয়ে ময়ূরেরা নাচ আরম্ভ করেছে।

মত্ত দাদুরি ডাকে ডাহুকী / ফাটি যাওত ছাতিয়া= ভেক ও আজ উন্মত্ত, ডাহুকী ডাকছে, আমার বুক ফেটে যাচ্ছে(কৃষ্ণ বিরহ)।

তিমির দ্বিক ভরি ঘর যামিনী/ অথির বিজুরিক ৺পাতিয়া= অন্ধকারে দশদিক ব্যপ্ত হয়েছে/ তমসি রাত্রির বুকে অস্থির বিদ্যুতের চমক দেখা যাচ্ছে।

বিদ্যাপতি কহ কৈছে গোঙায়বি / হরি বিনে দিন রাতিয়া= বিদ্যাপতি বলছেন রাধা হরি বিরহে এই রাত্রি কেমন করে যাপন করবেন।

ওর =সীমা, বাদর = বর্ষা,/ মাহ- মাস, / ঝম্পি- ঝেঁপে,/ বরখন্তিয়া= বর্ষণ হচ্ছে,/ পাহুন - প্রবাসী,/ কুশীল- বজ্র,/ সন্ততি- সর্বদা,/ দাদুরী- ভেক,/ ছাতিয়া- বুক/, বিজুরিক পাতিয়া- বিদ্যুতের সাড়ি,/ অথির- অস্থির,/ গোঙায়বি- কাটাবি বার্বি যাপন করবি,/ ভাদর- ভাদ্র মাস।

কৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করে কংস নিধনের জন্য মথুরায় গিয়েছিলেন আর ফিরে এলেন না। তাই রাধা বিরহ ভাবে জীবন যাপন করছে। এমন সময় বর্ষা দেখা দিয়েছে। ময়ূর ভেক প্রত্যেকে আনন্দে নাচছে ও ডাকছে। এবং এই সময় রাধাকৃষ্ণ বিরহে কাতর হয়ে উঠেছেন। তারই বর্ননা এখানে করা হয়েছে।
পদাবলী - কবি বিদ্যাপতি Dr. Delowar Jahan Imran 5 of 5
এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর। এ ভরা বাদর মাহ ভাদর শূন্য মন্দির মোর || ঝঞঝা ঘন গরজন্তি সন্ততি ভুব...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন